মঙ্গল শোভাযাত্রা নাকি অপসংস্কৃতির চর্চা?
Supriti Dhar Timeline |
রোজা বাদ দিয়ে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের পরামর্শ দিয়েছেন সুপ্রীতি ধর, যিনি সুইডেন বসে বাংলার সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের বানী শুনান!! মূলত এসব কলা বিজ্ঞানীদের জন্যই দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লেগেই থাকে। বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র।
“রাষ্ট্রের সংবিধানের গণতন্ত্র , সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং জাতীয়তাবাদ দর্শন হিসেবে গৃহীত হয়।”ধর্মনিরপেক্ষতা ছাড়া গণতন্ত্র কল্পনা করা যায় না।
বাংলাদেশে বর্তমানে UNESCO'র ঘোষিত অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে
৪ টি— বাউল সংগীত, জামদানি, মঙ্গল শোভাযাত্রা ও শীতলপাটির বয়ন পদ্ধতি।
তবে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা কি আদৌ বাঙালী’র সংস্কৃতির অংশ? এখানে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের চেয়ে নিজেদের সংস্কৃতির প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ নিরপেক্ষতার সাথে। একটু পূর্ব ইতিহাস জানা খুবই জরুরী আমাদের নইলে অচীরেই বাঙালী’র সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এককালে বিলীন হয়ে যাবে!
বর্ষপঞ্জিকার আদ্যোপান্ত
মুক্তমনা কিংবা তথাকথিত বুদ্ধিজীবী বা কলা বিজ্ঞানীদের কাছে পহেলা বৈশাখের ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ বাঙ্গালীর হাজার বছরের সংস্কৃতি বলে বিবেচিত। আসলে কি তাই?
ভারতবর্ষে মুঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর সম্রাটরা হিজরী পঞ্জিকা অনুসারে কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করতেন। কিন্তু হিজরি সন চাঁদের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় তা কৃষি ফলনের সাথে সামঞ্জস্য ছিল না। এর ফলে অসময়ে কৃষকদেরকে খজনা পরিশোধ করতে বাধ্য করতে হতো। খাজনা আদায়ে সুষ্ঠুতা প্রণয়নের লক্ষ্যে মুঘল সম্রাট আকবর বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। তিনি মূলত প্রাচীন বর্ষপঞ্জিতে এই সংস্কার আনার আদেশ দেন। সম্রাটের আদেশ মতে তৎকালীন বাংলার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদ ফতেহউল্লাহ সিরাজী সৌর সন এবং আরবি হিজরী সনের উপর ভিত্তি করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম বিনির্মাণ করেন।
১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ই মার্চ বা ১১ই মার্চ থেকে বাংলা সন গণনা শুরু হয়। তবে এই গণনা পদ্ধতি কার্যকর করা
হয় আকবরের সিংহাসন আরোহণের সময় (৫ই নভেম্বর, ১৫৫৬) থেকে। প্রথমে এই সনের নাম ছিল ফসলি সন, পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষ নামে পরিচিত হয়। মূলত, আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেককে চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হত। এরপরের দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে’র দিন ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হত। যেসময় থেকে এই উৎসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয় যার রুপ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছে। তবে বর্তমান নববর্ষকে প্রায় বিকৃত করে ফেলেছে বিশেষ কুচক্রী মহল।
সংস্কৃতির প্রচলন
তখনকার সময় এই দিনের প্রধান ঘটনা ছিল একটি হালখাতা তৈরি করা। হালখাতা বলতে একটি নতুন হিসাবের বই’কে বোঝানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে হালখাতা হল বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাটের (ব্যবসায়িক) হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম, শহর বা বাণিজ্যিক এলাকা, সকল স্থানেই পুরনো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন হিসাব বই খোলা হয়। হালখাতার দিনে দোকনদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টান্ন আপ্যায়ন করে থাকেন।
যদিও এই প্রথাটি এখনও প্রায় অনেকাংশে প্রচলিত রয়েছে।
মঙ্গল শোভাযাত্রা'র আগমন
এবার আসা যাক মূল প্রসঙ্গে, বর্তমানে দেশে মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে বিভিন্ন মুর্তি বানিয়ে যে উৎসবের আয়োজন করা হয়। তা বাস্তবে বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখের কোন সংস্কৃতি হওয়ার যৌক্তিকতা নেই। অতএব, এটা বলাই বাহুল্য এই আধুনিক যুগে এসে পেঁচা, হাতি, কাকপক্ষী বা জীবজন্তুর প্রতিমূর্তি মঙ্গল এনে দেবে বলে মঙ্গল শোভাযাত্রার অভিনব উদ্ভাবন সত্যিই হাস্যকর। এগুলো কোনোভাবেই আমাদের সনাতন ধর্মাবলম্বী ভাই-বোনদের ধর্মের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়!! বরং ইসলাম ধর্মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক তবুও কলা বিজ্ঞানীদের উসকানিমূলক বক্তব্যের জন্য মুসলিমদের সাথে বিবাদের সৃষ্টি হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে। আর এর মূলেই রয়েছে “অসাম্প্রদায়িকতা”।
এক শ্রেণির বিশেষ প্রাণী আছে যারা কখনো চায় নি এদেশের মানুষ অসাম্প্রদায়িক জীবনযাপন করুক। বাংলা নববর্ষের বয়স পাঁচশ বছরও নয়। সেখানে কলা বিজ্ঞানীদের কাছে এটি
বাঙালীর হাজার বছরের ঐতিহ্য হয় কিভাবে!? বাঙলি সংস্কৃতির বয়স সর্বোচ্চ হাজার বছরের
হতে পারে। তবে সেটা বাংলা নববর্ষের* নয়। নববর্ষের ঐতিহ্য হতে পারে হালখাতা বা দোকানপাটের
হিসাবের হালনাগাদ করা। আর পান্তা-ইলিশ খাওয়া প্রচলন অধুনা আবিস্কৃত মাত্র!
ইতিমধ্যে হয়তো বুঝতে পারছেন>> মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে কোন অনুষ্ঠান সার্বজনীন কোন অনুষ্ঠান নয়। এমনকি কোন ধর্মের ধর্মীয় অনুষ্ঠানও হতে পারে না। অতএব বাঙালী হিসেবে নিজেদের সংস্কৃতি বাঁচান!! বাংলাদেশ’কে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করুন। এই দেশে অসাম্প্রদায়িকতার। অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনা সমাজের সার্বিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।