ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
![]() |
Skytar Labs |
নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মদিন উদযাপন, যা ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) নামে পরিচিত, এর একটি নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক সূচনা রয়েছে। ঐতিহাসিক নথি অনুযায়ী, ইসলামের প্রাথমিক যুগ, অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন এবং প্রথম কয়েক শতাব্দীর শীর্ষস্থানীয় আলেমদের মাঝে এই উদযাপনের কোনো প্রচলন ছিল না।
উদযাপনের প্রথম সূচনা
ঐতিহাসিক প্রমাণ থেকে জানা যায় যে, মিলাদ উদযাপনের এই প্রথা হিজরতের প্রায় ৬০০ বছর পর শুরু হয়। এটি সর্বপ্রথম ৬৪০ হিজরিতে ইরাকের মসুল এলাকার শাসক মুজাফফারুদ্দিন ইবন আরবাল (মৃত্যু ৬৩০ হি.) দ্বারা প্রবর্তিত হয়। এই কাজটি একটি বিদ'আত (ধর্মীয় নতুন প্রথা) হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল, কারণ এর ভিত্তি কুরআন, সুন্নাহ বা প্রথম যুগের মুসলিমদের অনুশীলনে ছিল না।
এই উদ্যোগে মুজাফফারুদ্দিনকে সমর্থন দেন ইবনে ওয়াহিয়া আবুল খাত্তাব (মৃত্যু ৬৩৩ হি.) নামের একজন আলেম। ইমাম আহমদ বিন মুহাম্মদ মিসরি মালিকী (রহ.)-এর মতে, এই রাজা আলেমদেরকে তার ব্যক্তিগত ইজতিহাদ ও মতামত অনুসরণ করার নির্দেশ দিতেন। তিনি দুনিয়ামুখী কিছু আলেমের একটি দল জোগাড় করতে সক্ষম হন, যারা তার মতকে সমর্থন করে। এভাবেই তিনি প্রথম মুসলিম রাজা হিসেবে এই বিদ'আতের সূচনা করেন।
অতিরিক্ত ব্যয় এবং সমালোচিত চরিত্র
এই নতুন প্রথাকে জনপ্রিয় করার জন্য রাজা মুজাফফারুদ্দিন বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতেন। ঐতিহাসিক আল্লামা যাহাবি (মৃত্যু ৭৪৮ হি.) উল্লেখ করেছেন যে, রাজা প্রতি বছর এই অনুষ্ঠানের জন্য ৩,০০,০০০ দিনার খরচ করতেন। তিনি ইবনে ওয়াহিয়াকে এই উদযাপনের পক্ষে যুক্তি দিয়ে একটি বই লেখার জন্য দায়িত্ব দেন, যার জন্য তাকে ১,০০০ দিনার পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছিল।
যে আলেম এই প্রথাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সাহায্য করেছিলেন, সেই ইবনে ওয়াহিয়ার চরিত্রও ঐতিহাসিক গবেষণার বিষয়। হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানি তার গ্রন্থ লিসানুল মীজান-এ তাকে এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যিনি পূর্ববর্তী বুজুর্গ এবং আলেমদের প্রতি অসম্মানজনক আচরণ করতেন। তাকে বদমেজাজি, অত্যন্ত গর্বিত এবং ধর্মীয় বিষয়ে অমনোযোগী বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুতরাং, এই বিষয়ে প্রাপ্ত ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপনের একটি সুস্পষ্ট ঐতিহাসিক সূচনা রয়েছে, যা ৭ম শতাব্দীর হিজরিতে একজন শাসক এবং একজন আলেমের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল, এবং এটি ইসলামের প্রথম ও সবচেয়ে জ্ঞানী প্রজন্মগুলোর ধর্মীয় অনুশীলনের অংশ ছিল না।